বছর জুড়ে হরিলুট হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়েতে, করোনা সামগ্রী কিনে ২৯ চোর ধরা

Yasin Hoque    |    ১২:৩৭ পিএম, ২০২০-১২-৩১


বছর জুড়ে হরিলুট হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়েতে, করোনা সামগ্রী কিনে ২৯ চোর ধরা

ইয়াছিন হকঃ ২০২০ সালে রেলে ১০ ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) ক্রয় ও সরবরাহে চরম দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠছে রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শামছুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) আর এস মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ করছে খোদ লোকোমোটিভ, রিলিফ ক্রেন এবং লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ’ প্রকল্পের পরিচালক নূর আহাম্মদ হোসেন। করোনার মহামারিতে নিরাপত্তা সরঞ্জাম কিনে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে হরিলুট চালিয়েছিল রেলের ২৯ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। সারা বিশ্বের সকল ধর্মের মানুষ যখন করোনায় আতঙ্কিত তখন মালামাল ক্রয়ে সরকারের রাজস্বের টাকা চুরি করা নিয়ে ব্যস্ত ছিল তারা। এমনটা বলেছে সংস্থাটির নিজের অনুসন্ধান তদন্ত টিমের প্রতিবেদন। 

করোনা কালে যারা হরিলুটে ব্যস্থ ছিলেনঃ

রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিংস্টক) মঞ্জুর উল আলম চৌধুরী এবং পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক রুহুল কাদের আজাদ, পূর্বাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক সরদার শাহাদাত আলী, প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম, সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক বেলাল হোসেন সরকার, অতিরিক্ত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক আনোয়ারুল ইসলাম, এসপিও নজরুল আজাদ, অতিরিক্ত সিওপিএস পূর্ব (বর্তমানে সিপিও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে) সুজিত কুমার বিশ্বাস, এসিওএস সাহেব উদ্দিন, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চিকিৎসক ডা. ফাতেমা আক্তার, ডা. এমতিয়াজ, পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান জহিরুল ইসলাম, সিনিয়র সংস্থাপন কর্মকর্তা নজরুল আজাদ, ডিসিওএস মারুফ, কর্মকর্তা খায়রুল করিম, এমদাদুর রহমান, জাহিদ হাসান, আনোয়ারুল ইসলামসহ ২৯ কর্মকর্তা। এছাড়া করোনাসামগ্রী ক্রয়ে পূর্বাঞ্চলের দুর্নীতি নিয়ে ৩ মাস তদন্তের পর রেলের এডিজিসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সুপারিশ করে রিপোর্ট জমা দেয় তদন্ত কমিটি । এ ২৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যেমন সত্য উচ্চমূল্যে কেনাকাটার বিষয়টিও প্রমাণিত। 

যেভাবে মালামাল কেনায় হরিলুট করেছেঃ

২০২০ সালের এপ্রিল-মে জুড়ে রেলের কেনাকাটায় ১৫শ’টাকার থার্মোমিটার ১২ হাজার ৩০০ টাকা, ৮ টাকার গ্লাভস ৩২ টাকায়, ১০ টাকার মিনি সাবান ২৫ টাকায়, ১২০ টাকা কেজির ডিটারজেন্ট ১৮৮ টাকায়, ১২০ টাকা কেজির ব্লিচিং পাউডার ১৯৩ টাকায়, ১৩০ টাকার হেক্সিসল ৩৮৪ টাকায়, ১২০ টাকার প্লাস্টিক চশমা ৩৯৭ টাকায়, ১৫০ থেকে ৪০০ টাকার চীনের তৈরি কেএন-৯৫ মাস্ক ৭২৭ টাকায় এবং ট্রলি ও ফ্লুমিটারসহ প্রতিটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা হয় ৪১ হাজার টাকায়।অনিয়ম সন্ধানের তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসে রেলের কেনাকাটায় ৫টি জীবাণুনাশক টানেল ৬২ লাখ টাকায় কেনা হয়। মডার্ন প্রাইম কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান দুটি স্ক্যানার চুক্তির আগেই সরবরাহ করে। তদন্তে উঠে আসে, করোনাসামগ্রীর একই পণ্য ভিন্ন ভিন্ন দামে কেনা হয়েছে। কেএন-৯৫ মাস্ক এক দপ্তরে কেনা হয়েছে ৫৮৬ টাকায়, অন্য দপ্তর কিনেছে ৭২৭ টাকায়। এ ছাড়া একই সময় রেল চীনা ইনফারেড থার্মোমিটার প্রতিটি ১২ হাজার ৩৪০ টাকা ও ট্রলি ও ফ্লুমিটারসহ প্রতিটি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রায় ৪১ হাজার টাকায় কিনেছে।

রেলের ১০ লোকোমোটিভ ও ১৫০ কোচ কেনায় অনিয়মঃ

২০২০ সালে রেলে ১০ ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) ক্রয় ও সরবরাহে চরম দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠছে।রেলের ডিজি-এডিজির বিরুদ্ধে দশ ইঞ্জিন কেনায় অনিয়মের অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য লোকোমোটিভ, রিলিফ ক্রেন এবং লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ’প্রকল্পের পরিচালক নূর আহাম্মদ হোসেন। নিম্নমানের ১০টি ইঞ্জিন গ্রহণ করতে রাজি না হয়ে তিনি এসব ইঞ্জিন ক্রয়-গ্রহণে রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) মো. শামছুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) আর এস মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন। সুত্র বলছে রেলওয়ের দুর্নীতিবাজ শীর্ষ কর্তাদের আতাত করে নিম্নমানের ইঞ্জিন সরবরাহ করেছে কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি। প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেক্টর সার্টিফিকেট ছাড়াই ১০ ইঞ্জিন দেশে আনা হয়।ইঞ্জিনগুলো কেনায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় ২৪ নভেম্বর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।তাদের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত রিপোর্ট জমা হয়নি। যে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ (এডিজি) তাকেই কমিটির সদস্য করা নিয়ে প্রশ্ন করছে সংশ্লিষ্টরা।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ৩২২ কোটি টাকায় কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন সরবরাহ করে। এসব ইঞ্জিনে দরপত্রের শর্তানুযায়ী যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হয়নি। এগুলো নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন সনদ ছাড়াই বাংলাদেশে পাঠানো হয় আগস্টে। চুক্তি অনুযায়ী ইঞ্জিনগুলো সরবরাহ না করায় প্রকল্প পরিচালক তা গ্রহণ করেননি। কিন্তু, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে এগুলো জাহাজ থেকে নামিয়ে রাখা হয়েছে।

এদিকে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ১৫০টি রেলকোচ সংগ্রহের প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হাসান মনসুর বিধি লঙ্ঘন করেছেন। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বলছে, নিয়ম অনুযায়ী ১৫০টি কোচ (ক্যারেজ) সংগ্রহের দরপত্র সংবাদপত্রে আহ্বানের আগেই ‘অফিশিয়াল এস্টিমেট’ সিলগালা করে প্রকল্প পরিচালকের নিজের হেফাজতে রাখার কথা। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট দরপত্র আহ্বানের প্রায় দুই মাস পর এস্টিমেট সিলগালা করেন। এ ক্ষেত্রে বড় অনিয়ম হওয়ার আশঙ্কা করছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

তালা, ঝাণ্ডা ও বাঁশি কিনে হরিলুট করে আলোচিত পশ্চিমাঞ্চলঃ

২০২০ সালে পরিবহন অডিটের এক প্রতিবেদনে উঠে আশে পশিমাঞ্চল রেলওয়ের কেনাকাটার দুর্নীতির তথ্য। পাকশীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ডিসিওর চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন স্টেশনে লেভেলক্রসিং গেটে ব্যবহারের জন্য তালা, বালতি, ঝাণ্ডা ও বাঁশি কেনা হয়েছে। এইসব মালামাল উচ্চমূল্যে ক্রয় করে সরকারের ২৬ লক্ষ ৭৩ হাজার ৮৫০ টাকার আর্থিক ক্ষতি করেছে রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা। এমনকি এই দুর্নীতির সাথে জড়িত রয়েছে, এই ক্রয় সংক্রান্ত বাজার যাচাই কমিটি, এস্টিমেট/প্রাক্কলন প্রণয়নকারী, এস্টিমেট অনুমোদনকারী, টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি ও টেন্ডার মূল্যায়নের সুপারিশ অনুমোদনকারী এবং তাঁদের আস্তাভাজন ঠিকাদার।অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় এই চক্রটি রেলওয়ে ঘুনটি ঘরে ব্যবহারের জন্য ১৬৫ টাকা দামের তালা পাঁচ হাজার ৫৯০ টাকায়,৩৯০ টাকার প্রতিটি বালতি এক হাজার ৮৯০ টাকায়,৬৫ টাকার প্রতি হুইসেল বাঁশি ৪১৫ টাকায় এবং ২০৭ টাকার হাত ঝাণ্ডা এক হাজার ৪৪০ টাকায় কিনেছেন। এ ক্রয়ের মধ্যে শুধু তালা বাজার মূল্যের ৩৩ গুন উচ্চমূল্যে ক্রয় করে সরকার তথা জনগণের রাজস্বের ১৮ লক্ষ ১৮ হাজার ৯০০ টাকা মেরে দিয়েছে চক্রটি।

এমন তথ্য বেরিয়ে আসার পর প্রধান বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকায় এ এস এম শাহনেওয়াজকে পূর্বাঞ্চলের চীফ অপারেটিং সুপারেনটেনডেন্ট এর দায়িত্ব থেকে ও এসডি করা হয়। কিন্তু নিরিক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখিত আছে মালামালের বাজার যাচাই, এস্টিমেট/প্রাক্কলন প্রণয়নকারী, টেন্ডার আহব্বান ও পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করাসহ সকল কার্যক্রম সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক সিওএস বেলাল হোসেন সরকার এর দপ্তরে হয়। তবে এখনও পযন্ত এই সিওএস ক্ষমতার বলয় ব্যবহার করে নিজের চেয়ারে বহাল তবিয়তে থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।  এছাড়া পশ্চিমাঞ্চলের রেলে অস্বাভাবিক দরে মালামাল ক্রয় করলেও বাজার যাচাই কমিটি, এস্টিমেট/প্রাক্কলন প্রণয়নকারী ও পণ্যের মূল্য নির্ধারণকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এই কেনাকাটার অনিয়ম দুর্নীতি ও সরকারের রাজস্বের টাকা আত্বসাৎ এর ঘটনা তদন্তে কমিটি প্রায় ৩ মাস কাজ শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দুর্নীতিবাজ এই সিওএস বেলাল হোসেন সরকার ও তার ক্যাশিয়ার উচ্চমান সহকারী নুরুল আমিন তালুকদার, সাবেক সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (এসিওএস) মো. জাহিদ কাওছারের বিরুদ্ধে বরখাস্ত, বিভাগীয় ও ফৌজদারী মামলার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। রেলের সূত্রগুলো বলছে, এতদিন ঘুষের বিনিময় লবিং করে বহাল তবিয়তে থাকলেও অল্প সময়ে দুর্নীতির বরপুত্র সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক বেলাল হোসেন সরকার বরখাস্ত হচ্ছে। 

ব্রেন্ডের নামে লোকাল মাল, কাগজে ক্রয় করলেও সরবরাহ নেইঃ

এদিকে চলতি বছরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মালপত্র কেনাকাটার নিরীক্ষা করতে গিয়ে অভিনব সব দুর্নীতির দেখা পায় পরিবহন অডিট অধিদপ্তরের নিরীক্ষা (অডিট) কমিটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেলওয়ে মালপত্র কিনলেও তার অনেক কিছুই নিরীক্ষার সময় পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অধীন নাটোর স্টেশনে ২৫টি পর্দা মজুদে কম দেখা গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে তিন লাখ ৬৪ হাজার ৭৫০ টাকার। ২০১৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর পাকশী রেলওয়ের অধীন নাটোর স্টেশনের জন্য ৫০টি উন্নত মানের ভিআইপি পর্দা কেনা হয়। প্রতিটি পর্দার দাম ১৪ হাজার ৫৯১ টাকা হিসাবে দাম পরিশোধ করা হয়, কিন্তু ৫০টির বদলে সরবরাহ করা হয় ২৫টি পর্দা।একই অর্থবছরে খুলনা রি-মডেলিং স্টেশনের জন্য কেনা পর্দার মধ্যে ৯৪টি মজুদে কম পাওয়া যায়। এতে রেলওয়ের ক্ষতি হয়েছে ১০ লাখ ৫৪ হাজার ৮২১ টাকার। খুলনা রি-মডেলিং স্টেশনের বিভিন্ন কক্ষে ব্যবহারের জন্য ২৪৬টি উন্নত মানের ভিআইপি পর্দা কেনা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার পর্দাগুলো বুঝে নেন এবং মজুদ রেজিস্টারে এন্ট্রি করেন। নিরীক্ষা কর্মকর্তারা এ বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি সরেজমিনে খুলনা রি-মডেলিং স্টেশনে গিয়ে যাচাই করে ১৫২টি পর্দা পান। বাকি ৯৪টি পর্দা পাওয়া যায়নি। খুলনা রি-মডেলিং স্টেশনে সাত লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ টাকা দরের ১৬টি স্টিল আলমারি অরিজিন ও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী সরবরাহ না করায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। খুলনা রি-মডেলিং স্টেশনের জন্য ‘অটবি’ বা ‘হাতিল’ ব্র্যান্ডের ১৬টি স্টিল আলমারি কেনার কথা, যার প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ৪৯ হাজার ৯১২ টাকা। অথচ স্থানীয় বাজার থেকে নন-ব্র্যান্ডের ১৬টি স্টিল আলমারি কেনা হয়েছে। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সাত লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ টাকার।

বিনা প্রয়োজনে নিয়োগ করা হয়েছিল পরামর্শকঃ

ঈশ্বরদী থেকে ঢালার চর পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিনা প্রয়োজনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসিই কনসালট্যান্ট লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে ১৫ কোটি ১৬ লাখ ৩২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে উল্লিখিত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, যা পুরোটাই অপ্রয়োজনীয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেলওয়ের নিজস্ব সুদক্ষ লোকবল এবং সুনির্দিষ্ট ও সঠিক নির্দেশনা থাকার পরও পরামর্শক নিয়োগ অপ্রয়োজনীয় বলেও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও তাদের কাজ যথাযথভাবে করেনি। কনসালটেন্সি ফি হিসেবে দেওয়া পুরো ১৫ কোটি ১৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

মালপত্র সরবরাহ ছাড়াই বিল পরিশোধঃ

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১টি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে কেনা মালপত্র সরবরাহ না করে দুই কোটি ৫৬ লাখ ২৪ হাজার ১৪৮ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ২২০টি লাগেজ ট্রলি কেনার জন্য গত বছরের ১৭ জুন ২২০টি ‘প্রেসিডেন্ট ব্র্যান্ডের লাগেজ ট্রলি (ইন্ডিয়া) সরবরাহ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে। তবে এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে অডিট চলার সময় ওই ট্রলির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।